স্বদেশ ডেস্ক : কারারক্ষীর মাধ্যমে কারাগারে ইয়াবা সরবরাহের খবর প্রকাশ হওয়ার জের না কাটতেই এবার আদালত পুলিশের হেফাজতে থাকা বন্দির কাছে মিলল ইয়াবা বড়ি। রেজাউল করিম ওরফে ডাইল করিম ওরফে ছোট ডাইল করিম নামের এই বন্দি ১৮০ পিস ইয়াবা নিয়ে কারাগারে প্রবেশের মুহূর্তে গত বৃহস্পতিবার রাতে কারারক্ষীদের তল্লাশিতে ধরা পড়েন।
এ ছাড়া গতকাল শনিবার মুক্তা বেগম (৩৫) নামের এক নারীকে জেলখানার মাঠ থেকে ২২ পিস ইয়াবাসহ আটক করে পুলিশ। তিনি বন্দির সঙ্গে দেখা করে ইয়াবা বড়ি দিতে এসেছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। ডাইল করিমকে বৃহস্পতিবার রাতে আটক করলেও চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ গতকাল শনিবার কোতোয়ালি থানায় মামলা করে। আর মুক্তা বেগমকে গতকাল বেলা ১১টায় আটক করা হয়।
এ দুই ঘটনার দ্বারা কারাগারে তিন মাধ্যমে মাদক প্রবেশের বিষয়টি স্পষ্ট হলো। এই তিন মাধ্যম হলো-কারারক্ষীর মাধ্যমে মাদক প্রবেশ, আদালতে হাজিরা শেষে জেলফেরত বন্দি ও বন্দিদের দেখতে আসা স্বজনদের মাধ্যমে কারা অভ্যন্তরে মাদকপাচার।
তবে পুলিশ ও কারা কর্মকর্তারা বলেছেন, জেলখানা থেকে আদালতে হাজিরা দিতে আসা বন্দিদের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি ইয়াবা ও অন্যান্য মাদক কারাগারে প্রবেশ করে। চট্টগ্রাম কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. কামাল হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ২০ থেকে ৩০ পিস ইয়াবা বড়ি বহন করে আনার সময় ধরা পড়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তবে ডাইল করিম অনেক বেশি ইয়াবা বড়ি নিয়ে ধরা পড়লেন।
এসব ঘটনায় আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। গত ১৫ জুন সাইফুল ইসলাম নামের এক কারারক্ষী ৫০ পিস ইয়াবা বড়িসহ কোতোয়ালি থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। তিনি ছিলেন কারাবন্দি নুর আলম ওরফে হামকা আলমের ইয়াবা সরবরাহকারী। হামকা আলম কারাগারে বসেই কারাগারের ভেতরে ও বাইরে ইয়াবা ব্যবসা করেন বলে সাইফুল পুলিশকে তথ্য দেন। রেজাউল করিম ওরফে ডাইল করিমের (৪৫) বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদী হলেন চট্টগ্রামের ডেপুটি জেলার সৈয়দ হাসান আলী।
তিনি এজাহারে উল্লেখ করেন, গত ২০ জুন রাত সাড়ে আটটায় চট্টগ্রাম মহানগর আদালত থেকে ফেরার পথে ডাইল করিমকে কারা ফটকে তল্লাশি করা হয়। তখন তার গোপনাঙ্গের নিচে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় ১৮ গ্রাম (১৮০ পিস) ইয়াবা বড়ি পাওয়া যায়। গতকাল দায়ের করা মামলা ছাড়াও ডাইল করিমের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি, বন্দর ও হালিশহর থানায় ১০টি মাদক মামলা রয়েছে।
চলতি বছর এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে বন্দর এলাকায় তিনি মাদকসহ গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। তার বাড়ি নগরীর হালিশহরের ছোটপুলি কাঁচাবাজার। ২০০৭ সালে তিনি মাদকসহ প্রথম পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। আদালত ঘুরে দেখা যায়, চট্টগ্রাম আদালতের কয়েদখানায় আসা বন্দিদের সঙ্গে তাদের স্বজনরা হরহামেশাই দেখা করতে পারেন। তারা বন্দিদের জন্য বাসা বাড়ি থেকে আনা খাবারও খাওয়ান।
তবে এজন্য প্রতি বন্দির স্বজনকে সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা তুলে দিতে হয় কোর্ট পুলিশের হাতে। আদালতের কয়েদখানার সামনেই একজন পুলিশ কাগজ-কলম নিয়ে বসে বন্দিদের স্বজনদের আসা যাওয়া বাবদ দেওয়া অর্থ প্রকাশ্যে গ্রহণ করেন। পুলিশের এই নগদ অর্থ লাভের সুযোগেই কারাবন্দিরা নিয়ে আসেন মাদক থেকে শুরু করে অন্য জিনিসপত্র। অথচ জেলখানার মতোই আদালতেও বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের দেখা করার সুযোগ থাকার কথা নয়।
আদালতের কয়েদখানায় দেখা করার বিষয়টি খোলাখুলি হলেও তা পুরোপুরি অস্বীকার করেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. কামরুজ্জামান। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, এভাবে বন্দিদের সঙ্গে কারও কথা বলার সুযোগই নেই। আদালত থেকে কারাগারে ফেরার পথে বন্দিদের শরীর ব্যাপকভাবে তল্লাশি করা হয়। তা হলে রেজাউল করিমের শরীরে ইয়াবা বড়ি কীভাবে পাওয়া গেল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমন খবর আমার জানা নেই।